আসসালামু আলাইকুম।
একটা মুহূর্ত কল্পনা করুন। আপনি দাঁড়িয়ে আছেন মঞ্চে সামনে অনেক শ্রোতা। চোখে মুখে কৌতূহল। তারা আপনার দিকে তাকিয়ে, অপেক্ষায় আপনি কী বলতে যাচ্ছেন?
এখানেই শুরু হয় “উপস্থিত বক্তৃতা”র আসল খেলা।
আমি আজ কথা বলব উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার নিয়ম নিয়ে। এটা কোনো বইয়ের তত্ত্ব নয় এটা মাঠের অভিজ্ঞতা থেকে শেখা, সময়ের সঙ্গে তৈরি হওয়া কিছু বাস্তব কৌশল। চলুন, একটু গল্পের ছলে শিখে নেই।
🎯 ১. শুরুতেই উদ্দেশ্য পরিষ্কার করুন
আপনি বক্তৃতা দিতে যাচ্ছেন, কিন্তু কেন? নিজেকে প্রশ্ন করুন:
- আমি কি মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে চাই?
- কোনো সমস্যা তুলে ধরতে চাই?
- কোনো সমাধান দিতে চাই?
উদ্দেশ্য স্পষ্ট না থাকলে আপনার বক্তৃতা হবে ছন্নছাড়া।
ঠিক যেন গন্তব্য ছাড়া নৌকা।
📌 উদাহরণ: “আজ আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি একটি খুব পরিচিত অথচ অবহেলিত বিষয় নিয়ে—‘সময় ব্যবস্থাপনা’।”
💡 ২. শুরু করুন একটা গল্প বা বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে
মানুষ গল্প ভালোবাসে। আর বক্তৃতার শুরুতে একটা গল্প শ্রোতার মনোযোগ একদম আটকে দেয়।
ব্যক্তিগত গল্প হলে শ্রোতা আরও বেশি যুক্ত হয়।
📌 উদাহরণ: “মাত্র এক সপ্তাহ আগের কথা। অফিসে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিল। আমি দেরি করে পৌঁছালাম। জানেন কেন? কারণ আমি সকালে ঠিকভাবে পরিকল্পনা করিনি। এই একটা ছোট ভুল, পুরো দিনটা এলোমেলো করে দিল।”
😮 ৩. শ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ করুন একটা প্রশ্ন বা চমকপ্রদ তথ্য দিয়ে
বক্তৃতার শুরুতে এমন কিছু বলুন বা জিজ্ঞেস করুন, যা শ্রোতাকে ভাবতে বাধ্য করে।
📌 প্রশ্ন দিয়ে শুরু:
“আপনারা কি জানেন, আমাদের জীবনের ৩০% সময় আমরা শুধু পরিকল্পনা না থাকার কারণে অপচয় করি?”
📌 তথ্য দিয়ে শুরু:
“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে যার প্রধান কারণ: মানসিক চাপ।”
🤝 ৪. শ্রোতার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করুন
“আমি আর আপনারা একসাথে” এই অনুভূতিটা গড়ে তুলুন।
📌 উদাহরণ:
“আমি জানি, সময়মতো সব কাজ করা আমাদের সবার জন্য চ্যালেঞ্জ। আমিও এই সমস্যার মুখোমুখি হই। তাই আজ আমরা একসঙ্গে খুঁজব সমাধান।”
🧭 ৫. সংক্ষেপে বলুন কী কী নিয়ে কথা বলবেন
একটা ম্যাপ দিন শ্রোতাকে যাতে তারা জানে কোথায় যাচ্ছেন।
📌 উদাহরণ:
“আমার বক্তৃতায় আমরা তিনটা বিষয়ে কথা বলব: (১) সময় নষ্ট হওয়ার প্রধান কারণ, (২) কীভাবে সচেতনভাবে সময় ব্যবহার করা যায়, এবং (৩) কিছু সহজ কৌশল যেগুলো আমি নিজে ব্যবহার করি।”
🎤 ৬. আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করুন, কিন্তু বিনয় বজায় রাখুন
শ্রোতা চায়, আপনি আত্মবিশ্বাসী থাকুন। কিন্তু তা যেন অহংকার না হয়।
📌 বলতে পারেন:
“আপনাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি চেষ্টা করব, আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের কাজে লাগুক।”
এই শুরুটা শ্রোতাকে মূল্যায়ন করে, এবং আপনাকেও মানবিকভাবে উপস্থাপন করে।
✨ ছোট কিছু পরামর্শ
- মুখস্থ বক্তৃতা নয়, মনে রেখে বলুন।
- চোখে চোখ রাখুন শ্রোতার সঙ্গে।
- শরীরী ভাষা ব্যবহার করুন—হাত, মুখ, ভঙ্গি।
- শুরুতে ধীরে বলুন, শব্দগুলো যেন শ্রোতার মনে গেঁথে যায়।
আরও দেখুন: বাংলা স্বাগত বক্তব্য নমুনা
✅ উপসংহার
উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার সময় যদি আপনি –
- নিজের লক্ষ্য পরিষ্কার রাখেন,
- গল্প বলেন,
- প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন,
- সম্পর্ক গড়েন শ্রোতার সঙ্গে,
- কাঠামো দেন আপনার বক্তৃতায়,
- এবং আত্মবিশ্বাস দেখান—
তাহলে আপনার শুরুটাই হবে জয়ী।
স্মরণ রাখবেন, শুরুটা যতটা প্রাণবন্ত হবে, বক্তৃতার শেষটাও ততটা মনে গেঁথে থাকবে।
আপনি যদি মঞ্চে নামতে ভয় পান জানবেন, আপনি একা নন। আমি যখন প্রথম বক্তৃতা দিই, আমার হাত কাঁপছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে, অভ্যাস আর প্রস্তুতিই আপনাকে করে তুলবে একজন দক্ষ বাগ্মী।
চলুন, কথা বলা নয় মন ছুঁয়ে যাওয়া শিখি।
আপনার যদি এই আর্টিকেল পড়ে মনে হয়, “হ্যাঁ, আমি পারব!”, তবে আমি আমার কাজটা ঠিকঠাক করেছি।

আমি একটি কোম্পানির পাবলিক রিলেশনশিপ অফিসার হিসাবে কর্মরত আছি। আমার কর্মক্ষেত্রে সরাসরি জনগনের সাথে ডিল করার তাই আমি পাবলিকলি অনেক বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন পরে। তাছাড়াও বক্তব্য দেওয়া ও শোনাকে আমি বেশ উপভোগ করি।