একজন অংশগ্রহণকারীর চোখে দেখা এক ইতিহাসের পাতা
বন্ধুগণ,
আমি আজ যে বিষয়ে কথা বলতে এসেছি, তা শুধু ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়, এটি আমার নিজের জীবনের একটি রক্তমাখা বাস্তবতা। আমি জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর একজন প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী। আজ আমি আপনাদের সেই দিনগুলোর কথা বলবো। যেখানে স্বপ্ন, সাহস আর ত্যাগের গল্প লুকিয়ে আছে।
▪️ শুরুটা ছিল শুধু কোটা সংস্কার নিয়ে…
২০২৪ সালের জুন মাস। হঠাৎ সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮ সালের কোটা সংস্কারের সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করে পুরনো ৩০% কোটা ফিরিয়ে আনে। আমরা বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্ররা ভেবেছিলাম, এ কেমন বিচার? আমরা তো শুধু চাইছিলাম যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি হোক, মেধার যেন মূল্য থাকে।
আমরা “Students Against Discrimination” ব্যানারে জড়ো হলাম। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু করলাম প্রতিবাদ। অথচ সরকার দেখালো কঠোরতা, বর্বরতা, এমনকি ঘৃণা।
▪️ শাহবাগ থেকে শুরু, ছড়িয়ে পড়লো সারাদেশে
আমি ছিলাম শাহবাগে। মনে আছে, গরমে ঘেমে একাকার আমরা, তবু শ্লোগান ছেড়েছি বুক ভরে
“আমার কোটা আমি ফেরত চাই না, চাই ন্যায়বিচার!”
কিন্তু ৭ জুলাই, রাত নামতেই যেন নেমে এলো এক বিভীষিকা।
▪️ জুলাই মাসাকার: যা আজও দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে আসে
৭-১০ জুলাই এই ক’টা দিন আমি চাইলে ভুলতে পারতাম… কিন্তু পারি না। কারণ আমি নিজ চোখে দেখেছিকীভাবে ছাত্রদের, শিশুদের, নিরপরাধ মানুষদের গুলি করে হত্যা করা হলো।
জুলাই মাসাকারে যারা প্রাণ হারিয়েছে, তারা আমার বন্ধু ছিল, সহযোদ্ধা ছিল, কেউ কেউ ছিল শুধু পথচলতি প্রতিবাদী মানুষ।
আমরা তখন বুঝে গিয়েছিলাম এ লড়াই আর শুধু কোটার নয়, এ লড়াই হলো দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য।
▪️ গণঅসহযোগ: এক ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান
১ আগস্ট থেকে আমরা ঘোষণা দিলাম আর না! শুরু হলো গণঅসহযোগ আন্দোলন।
আমরা সরকারি চাকরিতে যাইনি, রাস্তায় নেমে এসেছি, কর্মক্ষেত্রে, বাজারে, স্কুলে, কলেজে সবখানে ছড়িয়ে দিলাম প্রতিবাদের আগুন।
৪ আগস্ট, সেই ঐতিহাসিক “লং মার্চ” এটা ছিল এমন এক দৃশ্য যা আমি কোনোদিন ভুলবো না।
ঢাকা শহরের দিকে এগিয়ে আসছে হাজার হাজার মানুষ। কারফিউ ভেঙে, ভয়কে পেছনে ফেলে।
▪️ পতনের দিন: এক দুঃস্বপ্নের অবসান
এই আন্দোলনের চাপে শেখ হাসিনা সরকার অবশেষে পদত্যাগে বাধ্য হয়।
তারপরের ঘটনাপ্রবাহও কম নাটকীয় নয়। তিনি এবং তার বোন শেখ রেহানা দেশ ছাড়েন, পালিয়ে যান ভারতে।
▪️ গণতন্ত্রের আলো: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা
দেশ পড়ে এক সাংবিধানিক সংকটে। কিন্তু এখানেও জাতি দেখিয়েছে ঐক্য। গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, নেতৃত্বে ছিলেন আমাদের গর্ব নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
এই সরকার কাজ শুরু করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার, দুর্নীতি রোধ, এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিকে।
▪️ আমাদের অর্জন: ফিরে পাওয়া গর্ব
জুলাই বিপ্লব আমাদের শিখিয়েছে যদি আমরা এক হই, তাহলে বড় বড় শাসকও কেঁপে ওঠে।
এটি ছিল মেধা, ন্যায়, আর মানুষের সম্মানের লড়াই। আমরা হেরিনি আমরা জিতেছি।
আমার সহযোদ্ধারা যারা শহিদ হয়েছে তাদের রক্তে লেখা হয়েছে একটি নতুন ইতিহাস।
আমি তাদের স্মরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধায়।
▪️ আজকের প্রেরণা, আগামী দিনের আশার আলো
আজ, ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে আমি গর্ব করে বলতে পারি আমি ছিলাম সেই বিপ্লবের একজন সৈনিক।
আমার সন্তানের কাছে আমি একদিন গর্ব করে বলবো,
“বাবা একটা সময় দেশের জন্য রাস্তায় নেমেছিল, লড়েছিল, জিতেছিল।”
🔻 শেষ কথা
জুলাই বিপ্লব কোনো সাধারণ আন্দোলন ছিল না।
এটা ছিল গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম।
এই বিপ্লব আমাদের শিখিয়েছে ভয় নয়, সত্যের পথেই বিজয়।
আজ আমরা যদি এই ইতিহাস ভুলে যাই, তাহলে সেই ত্যাগ বৃথা যাবে।
তাই আসুন, এই বিপ্লবকে স্মরণ করি, শিক্ষা নিই এবং ভবিষ্যৎকে গড়ি আরও শক্তিশালী গণতন্ত্রের ভিত্তিতে।
জয় হোক মানুষের, জয় হোক গণতন্ত্রের।
জয় হোক জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর সকল শহিদের প্রতি।

আমি একটি কোম্পানির পাবলিক রিলেশনশিপ অফিসার হিসাবে কর্মরত আছি। আমার কর্মক্ষেত্রে সরাসরি জনগনের সাথে ডিল করার তাই আমি পাবলিকলি অনেক বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন পরে। তাছাড়াও বক্তব্য দেওয়া ও শোনাকে আমি বেশ উপভোগ করি।