সবাই মিলে বসে আলোচনা করলাম, সিদ্ধান্ত নিলাম, কিন্তু সেগুলো লিখে রাখলাম না। তাহলে কিন্তু ভবিষ্যতে অনেক কিছু ভুলে যেতে পারি। তাই তো? ঠিক এখানেই দরকার পড়ে সভার কার্যবিবরণীর। এটা basically এমন একটা লেখা, যেখানে সভায় কী আলোচনা হলো, কে কী বলল, কী সিদ্ধান্ত হলো সবকিছু সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ঠিক কিভাবে লেখাটা লিখতে হবে? চিন্তা করো না, আমি আছি! চলো ধাপে ধাপে দেখে নিই।
🎯 ১. আগে থেকেই প্রস্তুতি নাও
সভা শুরু হওয়ার আগে কিছু জিনিস ঠিক করে রাখাই ভালো:
- সভাপতি ও উপস্থিত সদস্যদের নাম জানো
- অ্যাজেন্ডা (অর্থাৎ আলোচ্য বিষয়ে) চোখ বুলিয়ে নাও
- নিজের কাছে কলম আর খাতা (বা ল্যাপটপ) রেডি রাখো
একটা কথা মনে রেখো কার্যবিবরণী লেখার জন্য তোমাকে শার্লক হোমস হতে হবে না। শুধু খেয়াল রাখতে হবে কে কী বলছে আর কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
📝 ২. কী কী তথ্য রাখতে হবে?
সভার কার্যবিবরণীতে সাধারণত এই তথ্যগুলো রাখতে হয়:
- সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ, সময়, ও স্থান
- সভাপতির নাম (কে সভা পরিচালনা করছেন)
- উপস্থিত সদস্যদের নাম
- পূর্ববর্তী সভার কার্যবিবরণী অনুমোদনের কথা
- প্রধান আলোচ্য বিষয় ও আলোচনা
- যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে
- পরবর্তী সভার তারিখ (যদি ঠিক করা হয়)
👉 একটা ছোট টিপ: খুব ছোট ছোট বাক্যে পয়েন্ট আকারে লিখতে পারো। এতে পড়তে সুবিধা হয়।
💡 ৩. লেখার ধরন কেমন হবে?
- অফিশিয়াল, কিন্তু বেশি সিরিয়াস না — ব্যালান্স রাখতে হবে
- তথ্যভিত্তিক — নিজের মতামত ঢোকাবে না
- সোজাসাপ্টা ভাষা — ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে বলার দরকার নেই
- একটু গুছিয়ে — যাতে পরে পড়লে সব সহজে বুঝে নেওয়া যায়
একটা উদাহরণ দেই, ঠিক কেমন হতে পারে:
আলোচ্য বিষয় ২: বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
প্রধান শিক্ষক প্রস্তাব করেন যে আগামী ১৫ জানুয়ারি ক্রীড়া অনুষ্ঠান আয়োজন করা হোক। সদস্যরা প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করেন।
দেখলে? কত সহজ, পরিষ্কার!
✅ ৪. শেষ করার পর কী করবে?
সব লেখা হয়ে গেলে এটা নিশ্চিত করো:
- কার্যবিবরণী সঠিকভাবে টাইপ করা হয়েছে
- ভুল বানান বা তথ্য ঠিক আছে কি না চেক করো
- সভাপতির স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে কিনা
তুমি চাইলে এটা ইমেইলে পাঠাতে পারো বা প্রিন্ট করে রাখতে পারো অফিসিয়াল রেকর্ডের জন্য।
✅ সভার কার্যবিবরণী (FORMAT)
সভার নাম:
(যেমন: বার্ষিক পরিকল্পনা সভা / শিক্ষক পরিষদের সভা)
তারিখ:
(যেমন: ১৯ মে ২০২৫)
সময়:
(যেমন: সকাল ১০:০০টা থেকে ১১:৩০টা পর্যন্ত)
স্থান:
(যেমন: প্রধান শিক্ষকের কক্ষ / সভাকক্ষ)
সভাপতি:
(যিনি সভা পরিচালনা করছেন)
উপস্থিত সদস্যবৃন্দ:
(সবার নাম বা পদবী লিখো)
সভা কার্যবিবরণীঃ
১. পূর্ববর্তী সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন:
(যদি আগের সভার কার্যবিবরণী আলোচনা হয়, লিখে দাও কী সিদ্ধান্ত হয়েছে)
২. আলোচ্য বিষয় ১:
(প্রথম আলোচ্য বিষয় কী ছিল, কে কী বলেছে, সিদ্ধান্ত কী হয়েছে তা লিখো)
৩. আলোচ্য বিষয় ২:
(এভাবেই প্রতিটি আলোচ্য বিষয় আলাদাভাবে উল্লেখ করো)
৪. সিদ্ধান্তসমূহ:
_(সবার শেষে মূল সিদ্ধান্তগুলো পয়েন্ট আকারে তুলে ধরো)
- সিদ্ধান্ত ১
- সিদ্ধান্ত ২
- সিদ্ধান্ত ৩_
৫. পরবর্তী সভার তারিখ (যদি নির্ধারিত হয়):
(যেমন: ২৫ জুন ২০২৫)
সভাপতির স্বাক্ষর:
(নাম ও পদবী)
লেখকের নাম ও পদবী (যিনি কার্যবিবরণী লিখেছেন):
👋 শেষ কথা
সভার কার্যবিবরণী লেখা খুব জটিল কিছু না। বরং এটা এমন একটা দক্ষতা যা অনেক কাজে লাগবে স্কুলে, অফিসে, সংগঠনে, এমনকি নিজের প্রজেক্টেও। একবার অভ্যাস হয়ে গেলে তুমি বুঝতে পারবে, এটা আসলেই কতোটা দরকারি।

আমি একটি কোম্পানির পাবলিক রিলেশনশিপ অফিসার হিসাবে কর্মরত আছি। আমার কর্মক্ষেত্রে সরাসরি জনগনের সাথে ডিল করার তাই আমি পাবলিকলি অনেক বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন পরে। তাছাড়াও বক্তব্য দেওয়া ও শোনাকে আমি বেশ উপভোগ করি।