লিখেছেন: রাসেল হাওলাদার, একজন শিক্ষক, সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজ।
বিদ্যালয়ের আঙিনায় আজ যেন একটা অন্যরকম নীরবতা। প্রতিদিন যে কণ্ঠটি সকালে জাতীয় সংগীতের পর আমাদের মাঝে সাহস জোগাতো, পথ দেখাতো—আজ সেই কণ্ঠ বিদায়ের সুরে নীরব হয়ে গেছে।
আজ আমাদের প্রিয় প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের বিদায় অনুষ্ঠান।
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যখন আমি কথা বলছি, তখন আমার পরিচয় শুধু একজন শিক্ষক হিসেবে নয়, একজন ছাত্র, সহকর্মী, এবং কৃতজ্ঞ মানুষ হিসেবেও বলতে চাই। আমরা কি হারাতে চলেছি, আর তিনি আমাদের জন্য কী রেখে যাচ্ছেন।
👨🏫 একজন প্রধান শিক্ষক: যিনি শুধু প্রশাসক নন, একজন পথপ্রদর্শক
প্রধান শিক্ষক মানেই শুধু অফিসে বসে নথিপত্র দেখার মানুষ নন। আমাদের প্রধান শিক্ষক ছিলেন এমন একজন, যিনি ক্লাসের দরজায় দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের চোখে চোখ রেখে বলতেন—
“ভয় পেয়ো না, তুমি পারবে!”
তিনি ছিলেন এমন একজন নেতা, যিনি শুধু আদেশ করতেন না, পাশে দাঁড়াতেন, সহকর্মীদের হাত ধরে হাঁটতেন। যখন কারও পরিবারে সমস্যা হয়েছে, তিনিই প্রথম এগিয়ে এসেছেন। কেউ ক্লাসে পিছিয়ে পড়লে, তিনি সময় করে তাদের পাশে বসেছেন।
আমার নিজের অভিজ্ঞতায় বলি। আমি একবার একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করছিলাম, হঠাৎ কিছু সমস্যায় পড়ে যাই। তিনিই বলেছিলেন,
“শোনো, সমস্যা হলে থেমে যেও না। আমি আছি। শুরু করো। বাকিটা হয়ে যাবে।”
এই ভরসাই আমাকে আজ এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।
🏫 বিদ্যালয়ের গড়ায় যিনি ছিলেন ভিতরটা—অদৃশ্য কারিগর
বিদ্যালয়ের অনেক পরিবর্তন—নতুন ভবন, নতুন পাঠদান পদ্ধতি, অনলাইন শিক্ষা চালু করা—সবকিছুর পেছনে ছিলেন তিনি। অনেকেই জানেন না, বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে আজ যে ২০০০ বই আছে, তার অর্ধেক তিনি নিজে সংগ্রহ করেছিলেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন—“ভবিষ্যত গড়ে শিক্ষায়, আর শিক্ষা গড়ে সাহস ও সততায়।”
❤️ মানবিকতা ও মূল্যবোধের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি
একবার এক ছাত্রের বাবা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। পুরো পরিবার দিশেহারা। আমাদের প্রধান শিক্ষক নিজে গিয়ে সাহায্য করলেন, পাশে দাঁড়ালেন, আর ছেলেটিকে বললেন,
“তোমার বাবা দ্রুত সুস্থ হবেন। ততদিন তোমার দায়িত্ব আমাদের।”
এইরকম শত শত ঘটনার সাক্ষী আমরা সবাই। তাঁর মানবিকতা, সহানুভূতি, আর সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ আমাদের শিখিয়েছে—একজন শিক্ষক কেবল পঠন-পাঠনের সীমায় থাকেন না, তিনি একজন সমাজগঠকও।
👏 আজকের এই বিদায়: এক নতুন শুরু, এক অপূর্ণতা
আজ আমরা সবাই একসঙ্গে তাঁর জন্য বিদায় জানাতে এসেছি। কিন্তু এই বিদায় শুধু আনুষ্ঠানিক নয়, এটা যেন এক অনুভূতির বিসর্জনও।
আপনার অবদান আমরা গুনে শেষ করতে পারবো না, স্যার। আপনি ছিলেন আমাদের শক্তির উৎস, সাহসের পাথেয়, এবং মূল্যবোধের শিক্ষক।
আজ হয়তো আপনি সরকারি নিয়মে অবসর নিচ্ছেন, কিন্তু আপনার শিক্ষা, আদর্শ, আর ভালোবাসা—এই বিদ্যালয়ের প্রতিটি ইট-পাথরে রয়ে যাবে।
🙏 শেষ কথায়…
স্যার, আপনাকে আমরা কখনোই বিদায় দিতে পারবো না। আপনি ছিলেন, আছেন, এবং থাকবেন আমাদের হৃদয়ে। আপনার এই যাত্রা হোক শান্তিময়, সাফল্যময় এবং সুস্থতার।
আপনাকে আমাদের তরফ থেকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও শুভকামনা জানাই।

আমি একটি কোম্পানির পাবলিক রিলেশনশিপ অফিসার হিসাবে কর্মরত আছি। আমার কর্মক্ষেত্রে সরাসরি জনগনের সাথে ডিল করার তাই আমি পাবলিকলি অনেক বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন পরে। তাছাড়াও বক্তব্য দেওয়া ও শোনাকে আমি বেশ উপভোগ করি।