লিখেছেন: একজন ইসলামিক স্কলার ও মাদ্রাসা শিক্ষক
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্
ভাই ও বোনেরা,
আসুন আমরা আমাদের সব কাজের শুরুতে আল্লাহ তাআলার নামে শুরু করি। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“যে কাজ বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু হয় না, তা বরকতহীন হয়।” (আবু দাউদ)
আজকের এই লেখাটি আমি সাজিয়েছি সেই সমস্ত ভাই-বোনদের জন্য, যারা ইসলামিক কোনো প্রোগ্রামে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যান, কিন্তু জানেন না কিভাবে শুরু করতে হয়, কীভাবে সুন্দরভাবে বলাটা সুন্নতসম্মত হয়।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি—একটি ইসলামিক বক্তব্যের মূল সৌন্দর্য শুরুতেই। আপনি যেভাবে শুরু করবেন, শ্রোতার মনোযোগও সেভাবেই তৈরি হবে।
📌 ইসলামিক বক্তব্য দেওয়ার শুরুতে যা বলা হয়:
ইসলামিক বক্তব্য শুরু করতে হলে প্রথমেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও কথার মাধ্যমে শুরু করা সুন্নত ও সম্মানজনক। নিচে ধাপে ধাপে সাজানো হলো:
১. তাসলিয়া ও তাহমীদ: আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি প্রশংসা ও দরূদ
اَلْـحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ، وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ، وَعَلٰى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ أَجْمَعِيْنَ
উচ্চারণ:
আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল ‘আলামীন, ওয়াস্-সালাতু ওয়াস্-সালামু ‘আলা রাসূলিহিল কারীম, ওয়া ‘আলা আ-লিহি ওয়া আসহাবিহি আজমাঈন।
অর্থ:
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার, যিনি সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর প্রিয় রাসূল, তাঁর পরিবার ও সাহাবীগণের প্রতি।
🎯 এই অংশটি দিয়ে বক্তব্য শুরু করলে শ্রোতারা বুঝে যাবেন—এটি একটি ইসলামিক বক্তব্য, এবং আপনি সম্মানজনকভাবে শুরু করছেন।
২. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
বক্তব্য শুরুতে এই আয়াত পড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোরআনের প্রতিটি সূরাই আল্লাহর নামে শুরু হয়েছে।
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
অর্থ: পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
৩. কুরআনের আয়াত অথবা হাদীস দিয়ে শুরু করা (ঐচ্ছিক কিন্তু ফজিলতপূর্ণ)
যেমন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
(সূরা আহযাব: ৭০)
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য ও সঠিক কথা বল।
🔍 এইভাবে একটি আয়াত বা হাদীস দিয়ে বক্তব্য শুরু করলে তা জ্ঞান ও আখলাকের পরিচয় দেয় এবং বক্তব্যে ওজন আনে।
🎤 ইসলামিক বক্তব্য দেওয়ার নিয়ম: কিছু বাস্তব পরামর্শ
আমার দীর্ঘদিনের মাদ্রাসা পড়ানো এবং বিভিন্ন মাহফিলে বক্তৃতা দেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করছি—
✅ ১. নিয়ত ঠিক করুন
বক্তব্য দেয়ার উদ্দেশ্য যেন শুধুই আল্লাহর সন্তুষ্টি হয়। খ্যাতি বা বাহবা পাওয়ার জন্য না।
✅ ২. সহজ ভাষায় বলুন
অনেক সময় বক্তারা কঠিন আরবি শব্দ বা জটিল বাক্য ব্যবহার করেন, যা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন না। তাই আমি সবসময় বলি—বক্তব্য হোক সাধারণ, তবে হৃদয়ছোঁয়া।
✅ ৩. আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা কেন্দ্র করে বলুন
আপনার বক্তব্যে যেন আল্লাহর প্রতি ভয় এবং ভালোবাসা দুটোই থাকে। কেবল ভয় দেখিয়ে নয়, বরং আশা দিয়ে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকুন।
✅ ৪. দলীল ভিত্তিক কথা বলুন
যেখানে সম্ভব, কুরআন বা সহীহ হাদীসের রেফারেন্স দিন। এতে বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয় এবং ইসলামি জ্ঞানের প্রতি বিশ্বাস বাড়ে।
✅ ৫. বক্তব্য ছোট রাখুন, কিন্তু অর্থবহ করুন
রাসূল (সাঃ) এর বক্তব্য ছিল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু গভীর অর্থপূর্ণ। আমরাও সেই সুন্নত অনুসরণ করতে পারি।
🛑 যা করা থেকে বিরত থাকুন:
- অহেতুক উচ্চস্বরে চিৎকার করা
- অন্য মাজহাব বা মতকে তুচ্ছ করা
- বিদআতি বা ভিত্তিহীন গল্প শেয়ার করা
- কথার মাঝে অহংকার ফুটিয়ে তোলা
📚 উপসংহার
ইসলামিক বক্তব্য কেবল মুখের বুলি নয়—এটা হলো এক ধরনের দাওয়াত। আমরা যদি আন্তরিকভাবে, দীন ও দীপ্তি দিয়ে কথা বলি, তবে সেই কথা অনেকের অন্তরে পৌঁছে যেতে পারে।
আসুন, আমরা সবাই চেষ্টা করি সুন্নাহ অনুসরণ করে, সহজ ভাষায়, সত্য ও সুন্দরভাবে মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করতে।
💬 আপনার যদি বক্তব্য শুরুর আরেকটি স্টাইল বা দোয়া জানা থাকে, নিচে কমেন্ট করে শেয়ার করুন।
📢 আরও ইসলামিক বক্তৃতা ও উপস্থাপনার টিপস পেতে ভিজিট করুন 👉 Boktobbo.Com

আমি একটি কোম্পানির পাবলিক রিলেশনশিপ অফিসার হিসাবে কর্মরত আছি। আমার কর্মক্ষেত্রে সরাসরি জনগনের সাথে ডিল করার তাই আমি পাবলিকলি অনেক বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন পরে। তাছাড়াও বক্তব্য দেওয়া ও শোনাকে আমি বেশ উপভোগ করি।